মানবসমাজ এগিয়ে চলেছে। এক কথক ঠাকুর বলে চলেছেন সে গল্প। এক নদীর রূপকে, অসংখ্য শাখানদীকে যে নদী নিজেতে মিশিয়ে নিয়ে বয়ে চলে। পরিবর্তনের জন্য সক্রিয় হয়ে। তবে বয়ে চলা নদীরও তো থাকে কিছু কথা। বড় বড় সংঘর্ষের ভিতর দিয়ে তাকে মিলতে হয় মোহনায়। পদ্মভূষণ রাহুল সাংকৃত্যায়নের সুপ্রসিদ্ধ ‘ভোল্গা থেকে গঙ্গা’, নদী আর মানুষেরই গল্প। সর্বার্থেই সভ্যতার মহাকাব্য। অসংখ্য ভাষায়, অগণিত সংস্করণে যা আজও তুমুল জনপ্রিয়। আখ্যানবস্তুর আবেদনে, ছোট ছোট গল্পে ঐতিহাসিক সত্যের ভিতে দাঁড়িয়ে ভোল্গা থেকে বিকাশিত হয়ে, বিন্যস্ত হয়ে, তরঙ্গের পর তরঙ্গে কীভাবে একটি জাতির গাঙ্গেয় উপত্যকায় কূল মেলে-এ তারই পুরাণ। কাহিনির পর কাহিনিতে বিংশ শতাব্দীতে পৌঁছে ক্ষান্ত হন রাহুল সাংকৃত্যায়ন। কারণ তাঁর জানা ছিল, না-দেখা নতুন নতুন যে জগৎ পড়ে আছে আবিষ্কারের প্রতীক্ষায়, তাকে তাঁর পাঠকরা জয় করবেন সাম্যের আলোয়, সমতার সৌহার্দ্য।ে
কথাসাহিত্যের আদলে রাহুল সাংকৃত্যায়ন লিখেছিলেন কীভাবে মানুষ এগিয়ে চলে, সমাজ-জাতি-গোষ্ঠী গড়ে ওঠে, এবং বদলায়। ১৯৪৩ সালে হাজারিবাগ কারাগারের বন্দিত্বের আঁধার থেকে উৎসরিত আলো হয়ে আসে ‘ভোল্গা থেকে গঙ্গা’। প্রকাশের পরেই হিন্দি বলয়ে তুমুল আলোচিত-সমালোচিত হয়েছে এই গ্রন্থ। বাংলায় অনুবাদ করেন তিনজনে। অসিত সেন, সুধীর দাস আর মৃণাল চৌধুরী। পরের পর্ব ‘কনৈলা কি কথা’ প্রকাশ পায় বছর দশেক বিরতির পরে। এ পর্বের অনুবাদক ভগীরথ শীল। মানব-সমাজের চিরন্তন কাহিনি লিখেছেন উপমহাদেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ এক চিন্তক-কথক।