কণ্ঠে তাঁর হাসি, কণ্ঠে তাঁর গান, প্রাণে তাঁর অফুরান আনন্দ। মুখর তিনি, নির্ভীক-দুর্দমনীয়। বাঙালির সমন্বিত সংস্কৃতির বিভা-লাবণ্য ছড়ায়ে তিনি উচ্ছল-উজ্জ্বল সৃষ্টিসমগ্রে। ‘বিদ্রোহী কবি’ পরিচয়েই প্রতিভাত হলেও তাঁর প্রথম প্রকাশিত রচনাটি ছিল গল্প। যার সদ্যোজাত কবিতা মুদ্রণ-পুনঃমুদ্রণ হয়েছে নানা পত্রিকায় সেই কবির প্রথম প্রকাশিত গ্রন্থটিও কিন্তু ছিল গল্পগ্রন্থ। অনন্য গল্পকথক হিসেবে বাঙালির বিদ্রোহের প্রতীক কাজী নজরুল ইসলাম সম্প্রসারিত করেছেন বাংলা কথাসাহিত্যের সীমানাকে। কবিতা ও গানের মতো তাঁর গল্পেও প্রভাবকের দায়িত্ব পালন করেছে বাঁধনহারা জীবন। অথচ প্রকাশিত গল্পগ্রন্থের সংখ্যা মোটে তিন। আর গল্পসংখ্যা মাত্র ১৯।
বিষয়বৈচিত্র্যে, শৈলী-সংস্থানে এবং ভাষারূপে যার প্রতিটিই মৌলিক ও স্বতন্ত্র। গদ্যের এই জগৎটি মমত্বে, দায়িত্বশীলতায় ও আন্তরিকতায় রচেছিলেন নজরুল। ঔপনিবেশিক কালাকানুন-প্রথা-জাতভেদ উড়িয়ে দিয়ে তাঁর গল্পের চরিত্ররা যোগ দিয়েছিল মুক্তি সৈন্যদের দলে, বলেছিল ভালোবাসার কথা। নজরুল রচনার অসামান্যত্ব এখানেই যে তার প্রতিটি চরিত্রই যেন দেশ-কালের গণ্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক। মহাযুদ্ধোত্তর হতাশা, অবক্ষয় আর বিপর্যয়ের অন্দর হতে বাংলার আকাশে উত্থিত হয়েছিলেন বিদ্রোহী এক ধূমকেতু। যার কলম বলেছে দরিদ্র কৃষক, নিগৃহীত শ্রমজীবী মানুষের কথা। ডাক দিয়েছে সুবিধাভোগী শ্রেণির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে। যিনি সুর দিয়েছিলেন বাঙালির প্রাণে, উদ্দাম যৌবনে।